যার ছায়ায় আমি বড় হয়েছি—তিনি আমার বাবা
– মিসবাহ কাদেরী
আমার বাবা কোনো সুপারহিরো ছিলেন না, তাঁর হাতে ছিল না কোনো জাদু, ছিল না কোনো বড় চাকরি, গাড়ি বা ব্যাংক ব্যালান্স।
তবুও, আমার চোখে তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিমান মানুষ। কারণ, তিনি ছিলেন আমার জন্য সবকিছু।
ছোটবেলায় আমরা যখন ঈদের আগে মার্কেটে যেতাম, আমি একটা জামা পছন্দ করতাম, তখন তিনি মুখে বলতেন, “দাম একটু বেশি, অন্য দোকানে চলো।”
কিন্তু পরে আমি ঘুমিয়ে পড়লে, তিনি সেই জামাটাই কিনে নিয়ে আসতেন।
সকালে ঘুম ভাঙলে দেখতাম—সেই জামাটা বালিশের পাশে।
আমার হাসিই ছিল তাঁর প্রাপ্তি।
বাবা কখনো নিজের জন্য কিছু কেনেননি।
একবার ক্লাস নাইনে পড়ি, আমার একটা সাইকেলের খুব দরকার হয়েছিল।
তখন বুঝতাম না টাকার হিসাব। শুধু বলেছিলাম,
“আব্বা, আমার সাইকেল লাগবে।”
তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহ ভরসা, হয়ে যাবে।”
তিনদিন পর, একটা পুরোনো সাইকেল এনে দাঁড় করালেন দরজায়।
চোখে পানি চলে এসেছিল… তখন না বুঝলেও আজ বুঝি,
সে সাইকেলটার চাকা শুধু রাস্তা ঘুরায়নি—বাবার স্বপ্ন আর ত্যাগ ঘুরিয়েছে।
বাবা আমাদের খুশি রাখতে জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন।
সারাদিন কষ্টের পর বাসায় ফিরে আরাম করতেন না,
আমার খাতা খুঁজতেন, পড়াশোনার খোঁজ নিতেন।
আমি হয়তো অনেক সময় বিরক্তও হতাম,
কিন্তু এখন সেই খোঁজ নেওয়াটাকেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা মনে হয়।
আজ বাবা দিবসে সবাই যখন ছবি দিচ্ছে, পোস্ট দিচ্ছে,
আমি শুধু বসে আছি বাবার পেছনের সেই গল্পগুলো মনে করে—
যেখানে তিনি ছিলেন চুপচাপ, নীরব, কিন্তু ছায়ার মতো সর্বদা পাশে।
তিনি কখনো “ভালোবাসি” বলেননি,
তবু আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছি তাঁর কাছ থেকেই।
বাবা মানেই ত্যাগ, বাবা মানেই সাহস,
আর বাবা মানেই—”ভালোবাসার এমন একটা রূপ, যা কখনো বদলায় না।”
শুভ বাবা দিবস।
যার ছায়ায় আমি দাঁড়াতে শিখেছি, তিনি আমার বাবা।
সেই ছায়া আজো আমার জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।






